অধ্যায় ৬: জরিমানা ও আইনগত ব্যবস্থা

🔹 ভূমিকা

ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করলে শুধুমাত্র নিজের নয়, অন্যের জীবনকেও বিপন্ন করা হয়। এই কারণে ভারত সরকার মোটর ভেহিকল অ্যাক্ট, 1988 অনুযায়ী বিভিন্ন ধরণের জরিমানা ও আইনগত ব্যবস্থা চালু করেছে, যাতে চালক ও পথচারীরা আইন মানতে বাধ্য হন। এই অধ্যায়ে আমরা জানব সাধারণ ট্রাফিক আইন, সংশ্লিষ্ট ধারাসমূহ, জরিমানার পরিমাণ, এবং আদালতের প্রক্রিয়া সম্পর্কে।


🔹 সাধারণ ট্রাফিক আইনের গুরুত্বপূর্ণ ধারা

মোটর ভেহিকল অ্যাক্ট, 1988-এ বিভিন্ন ধারা রয়েছে যা ট্রাফিক আইন ভঙ্গের ক্ষেত্রগুলোকে চিহ্নিত করে। নিচে কিছু উল্লেখযোগ্য ধারার আলোচনা করা হলো:

ধারাঅপরাধসর্বোচ্চ জরিমানা / শাস্তি
Sec 177সাধারণ ট্রাফিক আইন ভঙ্গ₹500
Sec 184বেপরোয়া বা বিপজ্জনকভাবে গাড়ি চালানো₹5,000 বা 6 মাস কারাদণ্ড
Sec 185মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোপ্রথমবার ₹10,000 বা 6 মাস কারাদণ্ড, পুনরায় হলে ₹15,000 বা 2 বছর
Sec 192লাইসেন্স ছাড়া বা নথি ছাড়া গাড়ি চালানো₹5,000 পর্যন্ত
Sec 194Dহেলমেট না পরা (দুই চাকার যান)₹1,000 এবং লাইসেন্স সাসপেনশন
Sec 194Eমোবাইল ফোন ব্যবহার করে গাড়ি চালানো₹5,000 পর্যন্ত

মোটর ভেহিকল অ্যাক্ট 1988-এর গুরুত্বপূর্ণ অংশসমূহ

1988 সালের Motor Vehicles Act হল ভারতে সমস্ত গাড়ি, ড্রাইভার, রাস্তায় চলাচলের নিয়মনীতির প্রধান আইন। 2019 সালে এই আইনে সংশোধনী আনা হয়।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ:

  • ড্রাইভিং লাইসেন্স সংক্রান্ত বিধি
  • ভেহিকল রেজিস্ট্রেশন ও ফিটনেস
  • ইন্সুরেন্স বাধ্যতামূলক
  • শিশুর জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা
  • দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও পরিবেশ সুরক্ষা

📘 ধারা 130/177A অনুযায়ী: পুলিশ যেকোনো সময় গাড়ির কাগজপত্র চেক করতে পারে।

📘 ধারা 185 অনুযায়ী: যদি কেউ মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালায়, তাহলে সর্বোচ্চ 6 মাসের জেল বা ₹10,000 পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।


🔹 জরিমানার পদ্ধতি

বর্তমানে ট্রাফিক আইন ভাঙলে তিনটি উপায়ে জরিমানা ধার্য হতে পারে:

  1. On-the-spot Fine (চালানের মাধ্যমে) – পুলিশ কর্মী ঘটনাস্থলে জরিমানা আদায় করতে পারেন।
  2. E-Challan (ইলেকট্রনিক চালান) – ট্রাফিক ক্যামেরা বা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে নির্ধারিত মোবাইল নম্বরে চালান পাঠানো হয়।
  3. Court Challan (আদালতের মাধ্যমে বিচার) – গুরুতর বা পুনরাবৃত্ত অপরাধের ক্ষেত্রে চালককে আদালতে হাজির হতে হয়।

🔹 জরিমানা দেওয়ার পদ্ধতি

  • ই-চালানের ক্ষেত্রে https://echallan.parivahan.gov.in/ ওয়েবসাইট বা মোবাইল অ্যাপে গিয়ে জরিমানা অনলাইনেই প্রদান করা যায়।
  • চালকের লাইসেন্স নম্বর বা গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে বিস্তারিত দেখা যায়।
  • পেমেন্ট করলে প্রাপ্তি স্বীকারপত্র (Receipt) পাওয়া যায়।

🔹 আদালতের প্রক্রিয়া

যদি ট্রাফিক আইনের গুরুতর ভঙ্গ ঘটে, যেমন—

  • দুর্ঘটনা ঘটানো,
  • পালিয়ে যাওয়া,
  • লাইসেন্স ছাড়া বা চুরি হওয়া গাড়ি চালানো,

তবে চালককে আদালতে উপস্থিত হয়ে নিজের বক্তব্য পেশ করতে হয়। বিচারক আইন অনুযায়ী শাস্তি বা দণ্ড নির্ধারণ করেন।


🔹 সাধারণ মানুষের করণীয়

  • সবসময় বৈধ লাইসেন্স ও কাগজপত্র রাখুন।
  • হেলমেট, সিটবেল্ট পরুন ও স্পিড লিমিট মেনে চলুন।
  • নিয়মিত e-Challan ওয়েবসাইট চেক করুন।
  • আদালতের সমন পেলে নির্ধারিত তারিখে হাজিরা দিন।

🔚 উপসংহার

ট্রাফিক আইন শুধু পুলিশ বা সরকারের নয়, এটি আমাদের সবার। আইন ভঙ্গ করে জরিমানা দিলে শুধু টাকা হারাই না, বরং নাগরিক হিসেবে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিই। তাই সচেতন থাকুন, আইন মানুন এবং নিজে যেমন নিরাপদ থাকবেন, অন্যদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করবেন।