অধ্যায় ০৩ – জীবের শ্রেণীবিন্যাস

🌱🦠🐦পৃথিবীতে কোটি কোটি জীব বসবাস করে, তাদের আকৃতি, গঠন, বসবাসের স্থান এবং আচরণ একে অপরের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই বিশাল বৈচিত্র্যের মধ্যে শৃঙ্খলা আনতে বিজ্ঞানীরা জীবদের শ্রেণীবদ্ধ করেছেন। জীববিজ্ঞানীরা শ্রেণীবিন্যাসের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদের মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণ করেন, যা তাদের অধ্যয়ন ও গবেষণায় সহজ করে তোলে। জীববিজ্ঞানের এই শাখাকে বলা হয় ট্যাক্সোনমি।

জীবের শ্রেণীবিন্যাসের প্রয়োজনীয়তা 📚🔍

জীবজগত বিশাল ও জটিল। বিভিন্ন জীবকে সহজভাবে চিহ্নিত ও অধ্যয়নের জন্য শ্রেণীবিন্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি কেবল জীবের গঠন ও কার্যপ্রক্রিয়ার ভিত্তিতে নয়, তাদের বিবর্তনীয় সম্পর্ক বোঝার জন্যও ব্যবহৃত হয়।

শ্রেণীবিন্যাসের গুরুত্ব 🧬🌍

জীবের বৈচিত্র্য বোঝার জন্য এবং তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণ করতে শ্রেণীবিন্যাস গুরুত্বপূর্ণ। এটি বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে।

  • সহজ বোঝার জন্য – বিভিন্ন জীবকে শ্রেণীবদ্ধ করলে তাদের গঠন ও আচরণ বুঝতে সুবিধা হয়।
  • বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য – নতুন জীবের সন্ধান পেলে তাকে কোন শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে তা সহজ হয়।
  • ঐতিহাসিক বিবর্তন বোঝার জন্য – কোন জীব কীভাবে বিবর্তিত হয়েছে, তার পূর্বপুরুষ কে ছিল—এসব জানতে সাহায্য করে।

পাঁচ রাজ্যের বিভাজন 🏛️🌿

আধুনিক জীববিজ্ঞানে জীবদের শ্রেণীবিন্যাসের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি হলো আর. এইচ. উইটেকার প্রবর্তিত পাঁচ রাজ্যের বিভাজন। তিনি সমস্ত জীবকে পাঁচটি বড় ভাগে ভাগ করেছেন— মনেরা, প্রোটিস্টা, ফাঙ্গি, প্ল্যান্টি ও অ্যানিমেলিয়া।

মনেরা রাজ্য 🦠🔬

মনেরা রাজ্যের জীবগুলো হলো সবচেয়ে সরল গঠনের এককোষী জীব। এরা মূলত প্রোক্যারিওটিক, অর্থাৎ এদের কোষে সুগঠিত নিউক্লিয়াস থাকে না।

  • প্রাথমিক জীবনধারা – ব্যাকটেরিয়া ও নীল-সবুজ শৈবাল এই রাজ্যের অন্তর্গত।
  • কোষ গঠন – এদের কোষে সত্যিকারের নিউক্লিয়াস নেই, শুধু নিউক্লিওয়েড নামে এক অংশে জেনেটিক উপাদান থাকে।
  • প্রজনন পদ্ধতি – প্রধানত দ্বি-বিভাজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে।
  • বাসস্থান – মাটিতে, পানিতে, এমনকি উষ্ণ প্রস্রবণে ও বরফাচ্ছন্ন অঞ্চলেও এদের পাওয়া যায়।

প্রোটিস্টা রাজ্য 🦠🌊

প্রোটিস্টা রাজ্যের জীবরা এককোষী হলেও এদের কোষে সুগঠিত নিউক্লিয়াস থাকে, তাই এদের ইউক্যারিওটিক বলা হয়।

  • কোষ গঠন – এদের কোষের অভ্যন্তরে নিউক্লিয়াস ও অন্যান্য অঙ্গাণু থাকে।
  • চলাচলের পদ্ধতি – কিছু প্রোটিস্টার সিলিয়া, ফ্ল্যাজেলা বা ছদ্মপদ থাকে, যা তাদের চলাফেরায় সাহায্য করে।
  • উদাহরণ – অ্যামিবা, প্যারামিসিয়াম, ইউগ্লিনা ইত্যাদি।
  • বাসস্থান – সাধারণত জলজ পরিবেশে বসবাস করে।

ফাঙ্গি রাজ্য 🍄🦠

ফাঙ্গি বা ছত্রাক রাজ্যের জীবরা মূলত বহুকোষী হয়, তবে কিছু এককোষীও হতে পারে। এরা পরজীবী বা মৃতজীবী হতে পারে এবং সালোকসংশ্লেষণ করতে পারে না।

  • খাদ্য গ্রহণ পদ্ধতি – ফাঙ্গি মৃত জৈব পদার্থ থেকে পচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খাদ্য গ্রহণ করে।
  • কোষ গঠন – এদের কোষের দেয়ালে কাইটিন নামক বিশেষ যৌগ থাকে।
  • উদাহরণ – মাশরুম, ইস্ট, পেনিসিলিয়াম।
  • উপকারিতা – কিছু ছত্রাক থেকে ওষুধ তৈরি হয়, যেমন পেনিসিলিন।

প্ল্যান্টি রাজ্য 🌿🌾

প্ল্যান্টি রাজ্যের জীবদের আমরা সাধারণভাবে উদ্ভিদ বলি। এরা স্বপোষী, অর্থাৎ সূর্যালোক ব্যবহার করে খাদ্য তৈরি করতে পারে।

  • সালোকসংশ্লেষণ – উদ্ভিদ তাদের পাতায় থাকা ক্লোরোফিলের মাধ্যমে সূর্যালোক ব্যবহার করে খাদ্য তৈরি করে।
  • কোষ গঠন – এদের কোষের দেয়াল সেলুলোজ দ্বারা গঠিত।
  • উদাহরণ – শৈবাল, ফার্ন, ফুলের গাছ ইত্যাদি।
  • প্রজনন পদ্ধতি – কিছু উদ্ভিদ বীজের মাধ্যমে এবং কিছু স্পোরের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে।

অ্যানিমেলিয়া রাজ্য 🦁🐠

অ্যানিমেলিয়া রাজ্যের জীবেরা ভিন্নভাবে খাদ্য গ্রহণ করে এবং এরা সচল।

  • পরভোজী জীবনধারা – প্রাণীরা খাদ্য গ্রহণ করে এবং হজম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শক্তি অর্জন করে।
  • কোষ গঠন – প্রাণীদের কোষের দেয়ালে সেলুলোজ থাকে না, বরং নমনীয় কোষঝিল্লি থাকে।
  • প্রজনন পদ্ধতি – যৌন ও অযৌন উভয় উপায়ে বংশবৃদ্ধি করতে পারে।
  • উদাহরণ – মানুষ, মাছ, পাখি, কেঁচো, ব্যাঙ ইত্যাদি।

উপসংহার 🎯🌍

জীববৈচিত্র্য বিশাল এবং প্রতিটি জীব একে অপরের থেকে ভিন্ন। শ্রেণীবিন্যাসের মাধ্যমে আমরা জীবজগতকে সহজে বুঝতে পারি এবং গবেষণাকে উন্নত করতে পারি। পাঁচ রাজ্যের বিভাজন জীবদের গঠন, খাদ্যগ্রহণ, পরিবেশের সাথে সম্পর্ক ও বিবর্তন বোঝার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই শ্রেণীবিন্যাসের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা জীবজগতের বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হয়েছেন এবং ভবিষ্যতে আরও উন্নত গবেষণার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। 🌿🔬✨

প্রশ্ন ও উত্তর:

প্রশ্ন: জীববিজ্ঞানের যে শাখা জীবদের শ্রেণীবিন্যাস নিয়ে কাজ করে তাকে কী বলে?
উত্তর: ট্যাক্সোনমি

প্রশ্ন: জীবের শ্রেণীবিন্যাসের মূল উদ্দেশ্য কী?
উত্তর: জীবের বৈচিত্র্য বোঝা এবং তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণ করা

প্রশ্ন: আধুনিক জীববিজ্ঞানে শ্রেণীবিন্যাসের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি কে প্রবর্তন করেন?
উত্তর: আর. এইচ. উইটেকার

প্রশ্ন: উইটেকারের শ্রেণীবিন্যাস অনুযায়ী জীবজগৎ কয়টি রাজ্যে বিভক্ত?
উত্তর: পাঁচটি

প্রশ্ন: মনেরা রাজ্যের জীব কোন ধরনের কোষীয় গঠনের হয়?
উত্তর: প্রোক্যারিওটিক

প্রশ্ন: মনেরা রাজ্যের জীবের মধ্যে প্রধানত কোন ধরনের প্রাণী অন্তর্ভুক্ত?
উত্তর: ব্যাকটেরিয়া ও নীল-সবুজ শৈবাল

প্রশ্ন: প্রোটিস্টা রাজ্যের জীব কোন ধরনের কোষীয় গঠনের হয়?
উত্তর: ইউক্যারিওটিক

প্রশ্ন: কোন রাজ্যের জীব এককোষী হলেও নিউক্লিয়াসযুক্ত হয়?
উত্তর: প্রোটিস্টা

প্রশ্ন: ফাঙ্গি রাজ্যের জীব প্রধানত কীভাবে খাদ্য গ্রহণ করে?
উত্তর: মৃতজৈব পদার্থ থেকে পচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে

প্রশ্ন: ফাঙ্গি রাজ্যের কোষ প্রাচীর কোন উপাদান দ্বারা গঠিত?
উত্তর: কাইটিন

প্রশ্ন: উদ্ভিদ তাদের খাদ্য তৈরির জন্য কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শক্তি গ্রহণ করে?
উত্তর: সালোকসংশ্লেষণ

প্রশ্ন: প্ল্যান্টি রাজ্যের কোষের দেয়াল কী দিয়ে গঠিত?
উত্তর: সেলুলোজ

প্রশ্ন: অ্যানিমেলিয়া রাজ্যের জীব কেমন ধরনের খাদ্য গ্রহণ করে?
উত্তর: পরভোজী

প্রশ্ন: প্রাণীদের কোষের দেয়াল কী দিয়ে গঠিত?
উত্তর: প্রাণীদের কোষের দেয়াল থাকে না, কেবল নমনীয় কোষঝিল্লি থাকে

প্রশ্ন: মনেরা রাজ্যের প্রাণী কীভাবে বংশবৃদ্ধি করে?
উত্তর: দ্বি-বিভাজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে

প্রশ্ন: প্রোটিস্টা রাজ্যের জীব চলাফেরা করতে কী ব্যবহার করে?
উত্তর: সিলিয়া, ফ্ল্যাজেলা বা ছদ্মপদ

প্রশ্ন: উদ্ভিদের মধ্যে সালোকসংশ্লেষণের জন্য কোন উপাদান থাকে?
উত্তর: ক্লোরোফিল

প্রশ্ন: ফাঙ্গি রাজ্যের কোন উদাহরণ ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়?
উত্তর: পেনিসিলিয়াম

প্রশ্ন: কোন রাজ্যের জীব সূর্যালোক ব্যবহার করে নিজে খাদ্য তৈরি করতে পারে?
উত্তর: প্ল্যান্টি

প্রশ্ন: প্রাণীজগতের প্রধান বৈশিষ্ট্য কী?
উত্তর: পরভোজী, সচল এবং যৌন বা অযৌন প্রজনন করা


২০টি MCQ (একটি সঠিক উত্তর চিহ্নিত করা হলো ✅ চিহ্ন দিয়ে):

প্রশ্ন: জীববিজ্ঞানীরা শ্রেণীবিন্যাসের মাধ্যমে কী বোঝার চেষ্টা করেন?
(A) জীবের খাদ্য গ্রহণ প্রক্রিয়া
(B) জীবের বংশবৃদ্ধির গতি
(C) জীবের পারস্পরিক সম্পর্ক ✅
(D) জীবের দেহের রঙ

প্রশ্ন: ট্যাক্সোনমির প্রধান উদ্দেশ্য কী?
(A) জীবের জিনগত পরিবর্তন বোঝা
(B) জীবজগতে শৃঙ্খলা আনা ✅
(C) প্রাণীর আচরণ বিশ্লেষণ করা
(D) উদ্ভিদের বৃদ্ধি নির্ধারণ করা

প্রশ্ন: উইটেকারের শ্রেণীবিন্যাস অনুযায়ী নিম্নের কোনটি নয়?
(A) মনেরা
(B) প্ল্যান্টি
(C) প্রোটোজোয়া ✅
(D) অ্যানিমেলিয়া

প্রশ্ন: মনেরা রাজ্যের কোষ গঠন কেমন?
(A) ইউক্যারিওটিক
(B) প্রোক্যারিওটিক ✅
(C) বহুকোষী
(D) সেলুলোজযুক্ত

প্রশ্ন: মনেরা রাজ্যের জীবের প্রধান বৈশিষ্ট্য কী?
(A) সালোকসংশ্লেষণ করে
(B) নিউক্লিয়াস থাকে না ✅
(C) জটিল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থাকে
(D) কেবল জলজ পরিবেশে বাস করে

প্রশ্ন: নিচের কোনটি প্রোটিস্টা রাজ্যের উদাহরণ?
(A) ব্যাকটেরিয়া
(B) অ্যামিবা ✅
(C) মাশরুম
(D) পাইন গাছ

প্রশ্ন: ফাঙ্গি রাজ্যের কোষ দেয়াল কোন পদার্থ দিয়ে গঠিত?
(A) সেলুলোজ
(B) কাইটিন ✅
(C) প্রোটিন
(D) গ্লাইকোজেন

প্রশ্ন: নিচের কোনটি ফাঙ্গি রাজ্যের উদাহরণ?
(A) ইউগ্লিনা
(B) মাশরুম ✅
(C) কেঁচো
(D) শৈবাল

প্রশ্ন: প্ল্যান্টি রাজ্যের জীব কীভাবে খাদ্য গ্রহণ করে?
(A) মৃতজীবী
(B) পরজীবী
(C) স্বপোষী ✅
(D) পরভোজী

প্রশ্ন: উদ্ভিদের কোষের দেয়াল কোন উপাদানে গঠিত?
(A) কাইটিন
(B) সেলুলোজ ✅
(C) গ্লাইকোজেন
(D) প্রোটিন

প্রশ্ন: নিচের কোনটি উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য নয়?
(A) সালোকসংশ্লেষণ করে
(B) কাইটিনযুক্ত কোষ দেয়াল ✅
(C) শাখা-প্রশাখা থাকে
(D) বীজ বা স্পোরের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে

প্রশ্ন: প্রাণীজগতের প্রধান বৈশিষ্ট্য কী?
(A) সালোকসংশ্লেষণ
(B) স্থির থাকা
(C) পরভোজী ✅
(D) কোষ দেয়াল থাকা

প্রশ্ন: নিচের কোন প্রাণী অ্যানিমেলিয়া রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত?
(A) ইউগ্লিনা
(B) ব্যাকটেরিয়া
(C) মানুষ ✅
(D) শৈবাল

প্রশ্ন: ফাঙ্গি রাজ্যের কোন জীব থেকে ওষুধ তৈরি হয়?
(A) মাশরুম
(B) পেনিসিলিয়াম ✅
(C) ব্যাকটেরিয়া
(D) কেঁচো

প্রশ্ন: প্রাণীজগতে চলাফেরার জন্য কী ব্যবহৃত হয়?
(A) ক্লোরোফিল
(B) পুচ্ছ বা পা ✅
(C) সালোকসংশ্লেষণ
(D) ছদ্মপদ

প্রশ্ন: কোন রাজ্যের জীব পরভোজী?
(A) মনেরা
(B) প্ল্যান্টি
(C) অ্যানিমেলিয়া ✅
(D) প্রোটিস্টা

প্রশ্ন: নিচের কোনটি ফাঙ্গি রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত?
(A) শৈবাল
(B) অ্যামিবা
(C) ইস্ট ✅
(D) ফার্ন

প্রশ্ন: প্ল্যান্টি রাজ্যের উদাহরণ কোনটি?
(A) মাশরুম
(B) নারকেল গাছ ✅
(C) ব্যাকটেরিয়া
(D) অ্যামিবা

প্রশ্ন: অ্যানিমেলিয়া রাজ্যের প্রাণীরা কেমন?
(A) স্থির
(B) পরভোজী ✅
(C) সালোকসংশ্লেষণকারী
(D) মৃতজীবী