ভূমিকা:
বাংলা ভাষার ব্যাকরণিক কাঠামো গঠনের অন্যতম প্রধান উপাদান হলো পদ। ভাষার প্রতিটি বাক্য বিভিন্ন ধরনের পদ দ্বারা গঠিত হয়। বাক্যের মধ্যে শব্দ বিভিন্ন ভূমিকায় ব্যবহৃত হয়, আর এই ভূমিকার ভিত্তিতেই শব্দকে পদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই অধ্যায়ে আমরা পদ কী, তার শ্রেণিবিন্যাস, বৈশিষ্ট্য ও ব্যবহার সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করবো।
১. পদ কী?
যে শব্দ বা শব্দসমষ্টি বাক্যের মধ্যে নির্দিষ্ট ব্যাকরণিক অর্থ প্রকাশ করে, তাকে পদ বলে।
উদাহরণ:
- রাম পড়ছে। (এখানে “রাম” একটি বিশেষ্য পদ, “পড়ছে” একটি ক্রিয়া পদ।)
- সে খুব দ্রুত হাঁটে। (এখানে “সে” সর্বনাম পদ, “খুব” বিশেষণ পদ, “দ্রুত” ক্রিয়া বিশেষণ পদ, “হাঁটে” ক্রিয়া পদ।)
২. পদের শ্রেণিবিন্যাস
বাংলা ব্যাকরণে পদকে অর্থ ও ব্যবহার অনুযায়ী ৮টি ভাগে বিভক্ত করা হয়—
পদের প্রকারভেদ | উদাহরণ |
বিশেষ্য পদ | বই, মানুষ, গাছ |
সর্বনাম পদ | সে, তুমি, আমি |
বিশেষণ পদ | ভালো, সুন্দর, লম্বা |
ক্রিয়া পদ | খাওয়া, চলা, লেখা |
অব্যয় পদ | ও, যদি, তাই, কিন্তু |
সংযোজক পদ | এবং, অথচ, কিংবা |
নিষেধাত্মক পদ | না, নয়, কখনো |
ক্রিয়া বিশেষণ পদ | ধীরে, দ্রুত, ভালোভাবে |
৩. বিশেষ্য পদ
বিশেষ্য হলো সেই পদ যা কোনো ব্যক্তি, বস্তু, প্রাণী, গুণ বা অবস্থা নির্দেশ করে।
বিশেষ্যের প্রকারভেদ:
বিশেষ্যকে প্রধানত চারটি ভাগে ভাগ করা হয়—
(ক) ব্যক্তি বিশেষ্য
যে বিশেষ্য কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি, বস্তু বা প্রাণীর নাম নির্দেশ করে, তাকে ব্যক্তি বিশেষ্য বলে।
উদাহরণ:
- রবি (নাম), বাংলাদেশ (দেশের নাম), পদ্মা নদী (নদীর নাম)
(খ) বস্তু বিশেষ্য
যে বিশেষ্য দৃশ্যমান বা স্পর্শযোগ্য বস্তুর নাম বোঝায়, তাকে বস্তু বিশেষ্য বলে।
উদাহরণ:
- গাছ, কলম, বই, চেয়ার
(গ) ভাব বিশেষ্য
যে বিশেষ্য কোনো অবস্থা, গুণ বা অনুভূতি প্রকাশ করে, তাকে ভাব বিশেষ্য বলে।
উদাহরণ:
- সৌন্দর্য, দুঃখ, আনন্দ, দয়া
(ঘ) সমষ্টি বিশেষ্য
যে বিশেষ্য একাধিক ব্যক্তি বা বস্তু একত্রে বোঝায়, তাকে সমষ্টি বিশেষ্য বলে।
উদাহরণ:
- দল, শ্রেণি, জাতি, বাহিনী
৪. সর্বনাম পদ
যে শব্দ বিশেষ্যের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়, তাকে সর্বনাম পদ বলে।
সর্বনামের প্রকারভেদ:
সর্বনামের প্রকার | উদাহরণ |
ব্যক্তিবাচক সর্বনাম | আমি, তুমি, সে, তারা |
নিষেধাত্মক সর্বনাম | কেউ, কিছু, কেউ না |
প্রশ্নবাচক সর্বনাম | কে, কী, কেমন, কেন |
সাংকেতিক সর্বনাম | এটি, ওটি, সেগুলো |
সম্পর্কবাচক সর্বনাম | যে, যা, যারা |
৫. বিশেষণ পদ
যে শব্দ বিশেষ্যের গুণ, পরিমাণ, সংখ্যা বা অবস্থা নির্দেশ করে, তাকে বিশেষণ বলে।
বিশেষণের প্রকারভেদ:
বিশেষণের প্রকার | উদাহরণ |
গুণবাচক বিশেষণ | ভালো, মিষ্টি, লম্বা |
পরিমাণবাচক বিশেষণ | অনেক, সামান্য, কম |
সংখ্যাবাচক বিশেষণ | এক, দুই, শত, হাজার |
৬. ক্রিয়া পদ
যে পদ কোনো কাজ সম্পাদন করা বোঝায়, তাকে ক্রিয়া পদ বলে।
ক্রিয়ার প্রকারভেদ:
ক্রিয়ার প্রকার | উদাহরণ |
প্রধান ক্রিয়া | খাওয়া, লেখা, দৌড়ানো |
সহায়ক ক্রিয়া | হতে, থাকা, রাখা |
সমাপিকা ক্রিয়া | সে চলে গেল। |
অসমাপিকা ক্রিয়া | সে খাচ্ছে। |
৭. ক্রিয়া বিশেষণ পদ
যে শব্দ ক্রিয়া সম্পর্কে অতিরিক্ত তথ্য দেয়, তাকে ক্রিয়া বিশেষণ বলে।
উদাহরণ:
- সে দ্রুত দৌড়ায়। (“দ্রুত” এখানে ক্রিয়া বিশেষণ)
- আমি ভালোভাবে পড়ি। (“ভালোভাবে” ক্রিয়া বিশেষণ)
৮. অব্যয় পদ
যে শব্দ বাক্যে অপরিবর্তিত থাকে এবং অন্য শব্দের সাথে সংযোগ ঘটায়, তাকে অব্যয় পদ বলে।
অব্যয়ের প্রকারভেদ:
অব্যয়ের প্রকার | উদাহরণ |
সমুচ্চয়বাচক অব্যয় | এবং, অথবা, কিন্তু |
নিষেধবাচক অব্যয় | না, কখনো, মোটেও |
প্রশ্নবাচক অব্যয় | কেন, কবে, কীভাবে |
৯. সংযোজক পদ
যে শব্দ দুটি বাক্য বা বাক্যের অংশকে যুক্ত করে, তাকে সংযোজক পদ বলে।
উদাহরণ:
- আমি বই পড়ি এবং গান শুনি। (“এবং” একটি সংযোজক পদ)
উপসংহার:
পদ বাংলা ব্যাকরণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। একটি বাক্যে সঠিকভাবে পদের ব্যবহার না জানলে, তা অর্থহীন হয়ে যেতে পারে। তাই ব্যাকরণ শেখার জন্য পদের শ্রেণিবিন্যাস ও ব্যবহার সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকা জরুরি।
প্রশ্ন ও অনুশীলনী:
১. পদ কাকে বলে?
2. বাংলা ভাষায় কত প্রকার পদ আছে?
3. বিশেষ্য ও বিশেষণের মধ্যে পার্থক্য কী?
4. সর্বনামের পাঁচটি উদাহরণ লিখুন।
5. অব্যয় ও সংযোজক পদের মধ্যে পার্থক্য কী?