অধ্যায় ১১: লিঙ্গ, বচন ও পুরুষ

লিঙ্গ, বচন ও পুরুষ

বাংলা ব্যাকরণে লিঙ্গ, বচন ও পুরুষ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাক্যের গঠন ও অর্থ বোঝার জন্য এই তিনটি উপাদান সঠিকভাবে জানা দরকার। এই অধ্যায়ে আমরা লিঙ্গ, বচন ও পুরুষের সংজ্ঞা, শ্রেণিবিন্যাস ও উদাহরণ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো।


লিঙ্গ

যে বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে আমরা কোনো ব্যক্তি, প্রাণী বা বস্তুকে পুরুষ, স্ত্রী, উভয় বা নিরপেক্ষ শ্রেণিতে বিভক্ত করতে পারি, তাকে লিঙ্গ বলে।

📌 উদাহরণ:
ছেলে (পুরুষবাচক)
মেয়ে (স্ত্রীবাচক)
শিশু (উভয়লিঙ্গ)
বই (ক্লিবলিঙ্গ)

লিঙ্গের প্রকারভেদ

📌 বাংলা ভাষায় লিঙ্গ প্রধানত চার প্রকার:

(১) পুংলিঙ্গ – যা দ্বারা পুরুষ বা পুরুষজাতীয় জীব বোঝানো হয়।
(২) স্ত্রীলিঙ্গ – যা দ্বারা নারী বা স্ত্রীজাতীয় জীব বোঝানো হয়।
(৩) উভয়লিঙ্গ – যা দ্বারা পুরুষ ও নারী উভয়কে বোঝানো হয়।
(৪) ক্লিবলিঙ্গ – যা দ্বারা নিরপেক্ষ বা অপ্রাণবাচক বস্তু বোঝানো হয়।


পুংলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গ রূপান্তর

📌 অনেক শব্দের পুংলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গ ভিন্ন হয়। কিছু সাধারণ পরিবর্তনের ধরন:

“-তা” যুক্ত করলে স্ত্রীলিঙ্গ হয়:
পন্ডিত → পন্ডিতা
কবি → কবিতা

“-নী” যুক্ত করলে স্ত্রীলিঙ্গ হয়:
রাজা → রাণী
বিধান → বিধানী

ভিন্ন শব্দ দ্বারা পরিবর্তন:
বাবা → মা
ভাই → বোন


বচন

যে বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে কোনো শব্দ একবচন বা বহুবচন বোঝায়, তাকে বচন বলে।

📌 উদাহরণ:
বই (একবচন), বইগুলো (বহুবচন)
ছাত্র (একবচন), ছাত্ররা (বহুবচন)

বচনের প্রকারভেদ

(১) একবচন: যখন কোনো শব্দ দ্বারা একটি মাত্র ব্যক্তি, প্রাণী বা বস্তু বোঝানো হয়।
(২) বহুবচন: যখন কোনো শব্দ দ্বারা একাধিক ব্যক্তি, প্রাণী বা বস্তু বোঝানো হয়।


একবচন থেকে বহুবচন রূপান্তর

📌 নিয়ম অনুসারে একবচনকে বহুবচনে রূপান্তর করা যায়:

“-রা” যুক্ত করলে বহুবচন হয়:
ছাত্র → ছাত্ররা
পাখি → পাখিরা

“-গণ” যুক্ত করলে বহুবচন হয় (শ্রদ্ধাসূচক):
গুরু → গুরুগণ
বিদ্বান → বিদ্বানগণ

“-গুলি” ও “-গুলো” যুক্ত করলে বহুবচন হয়:
বই → বইগুলি / বইগুলো
গাছ → গাছগুলি / গাছগুলো

সংখ্যাবাচক শব্দ যুক্ত করলে বহুবচন হয়:
গরু → পাঁচটি গরু
বই → তিনটি বই


পুরুষ

বাক্যে কথা বলা, শোনা বা উল্লেখিত ব্যক্তি/বস্তুর অবস্থানের ভিত্তিতে পুরুষ নির্ধারিত হয়।

📌 উদাহরণ:
আমি (উক্তি)
তুমি (সম্বোধন)
সে (উল্লেখ)

পুরুষের প্রকারভেদ

📌 বাংলা ভাষায় তিন প্রকার পুরুষ রয়েছে:

(১) উৎকৃষ্ট পুরুষ – যার মাধ্যমে শ্রদ্ধাসূচক সম্বোধন করা হয়।
(২) মধ্যম পুরুষ – যার সঙ্গে কথা বলা হয়।
(৩) নিম্ন পুরুষ – যার সম্পর্কে কথা বলা হয়।


উৎকৃষ্ট পুরুষ

📌 যে ব্যক্তির প্রতি সম্মান বা শ্রদ্ধা প্রকাশ করা হয়, তাকে উৎকৃষ্ট পুরুষ বলা হয়।

উদাহরণ:
আপনি, আপনারা, মহাশয়, গুরুজন, স্যার ইত্যাদি।

বাক্য:
আপনি কেমন আছেন?
মহাশয়, আপনি কোথায় যাবেন?


মধ্যম পুরুষ

📌 যার সঙ্গে সরাসরি কথা বলা হয়, তাকে মধ্যম পুরুষ বলা হয়।

উদাহরণ:
তুমি, তোমরা, তুই, তোরা ইত্যাদি।

বাক্য:
তুমি কেমন আছো?
তোরা কোথায় যাচ্ছিস?

📌 তুমি সম্মানসূচক হলেও, তুই অনেক ক্ষেত্রে অসম্মানসূচক হতে পারে।


নিম্ন পুরুষ

📌 যার সম্পর্কে কথা বলা হয়, তাকে নিম্ন পুরুষ বলা হয়।

উদাহরণ:
সে, তারা, এটি, সেটা, ঐ ব্যক্তি ইত্যাদি।

বাক্য:
সে খুব ভালো ছাত্র।
তারা বই পড়ছে।


উপসংহার

লিঙ্গ, বচন ও পুরুষ ব্যাকরণের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
✔ সঠিক লিঙ্গ ব্যবহার বাক্যের অর্থ পরিবর্তন করতে পারে।
✔ একবচন ও বহুবচনের ব্যবহার বাক্যের গঠন ও অর্থের স্পষ্টতা নিশ্চিত করে।
✔ পুরুষের সঠিক ব্যবহার না করলে বাক্য অর্থহীন হতে পারে।

এই অধ্যায় পড়ে শিক্ষার্থীরা লিঙ্গ, বচন ও পুরুষের যথাযথ ব্যবহার সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাবে।