ক্রিয়া ও ক্রিয়ার রূপান্তর
বাংলা ব্যাকরণে ক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। বাক্যের মধ্যে ক্রিয়াপদ না থাকলে কোনো সম্পূর্ণ অর্থ তৈরি হয় না। ক্রিয়া মূলত কোনো কাজ, অবস্থা বা পরিবর্তন প্রকাশ করে। এ অধ্যায়ে আমরা ক্রিয়ার সংজ্ঞা, প্রকারভেদ ও রূপান্তর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
ক্রিয়ার সংজ্ঞা
যে শব্দ দ্বারা কোনো কাজ করা, হওয়া বা থাকা প্রকাশ পায়, তাকে ক্রিয়া বলে।
📌 উদাহরণ:
✔ আমি লিখছি। (কাজ করা)
✔ সে ঘুমাচ্ছে। (অবস্থা বোঝানো)
✔ সূর্য উদিত হয়। (পরিবর্তন বোঝানো)
ক্রিয়ার প্রকারভেদ
ক্রিয়াকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভাগ করা যায়।
১. প্রকৃত ক্রিয়া ও প্রক্রিয়াজাত ক্রিয়া
📌 প্রকৃত ক্রিয়া – যে ক্রিয়া মূল ক্রিয়াপদ হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং স্বতন্ত্র অর্থ বহন করে।
✔ উদাহরণ: যাও, খাও, পড়ো, হাসো ইত্যাদি।
📌 প্রক্রিয়াজাত ক্রিয়া – যে ক্রিয়া প্রধান ক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়ে নতুন অর্থ প্রকাশ করে।
✔ উদাহরণ: শিখে নাও, দেখে আসো, পড়ে ফেলো ইত্যাদি।
২. মূল ক্রিয়া ও সহায়ক ক্রিয়া
📌 মূল ক্রিয়া – যে ক্রিয়া বাক্যে স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত হয় এবং সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে।
✔ উদাহরণ: সে খায়, আমি লিখি, তারা পড়ে।
📌 সহায়ক ক্রিয়া – যে ক্রিয়া অন্য কোনো ক্রিয়ার সহায়ক হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং একা পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করতে পারে না।
✔ উদাহরণ: আসছে, হচ্ছে, গেছে, ছিল, হয়েছে ইত্যাদি।
উদাহরণ:
✔ আমি যাচ্ছি (সহায়ক ক্রিয়া: যাচ্ছি)
✔ তুমি থাকবে (সহায়ক ক্রিয়া: থাকবে)
৩. কর্মপ্রবৃত্তি অনুযায়ী ক্রিয়া
📌 সকর্মক ক্রিয়া – যে ক্রিয়ার সঙ্গে একটি কর্মপদ থাকে এবং কর্তার ক্রিয়ার উপর কর্মের প্রভাব পড়ে।
✔ উদাহরণ: আমি বই পড়ছি। (বই = কর্ম)
✔ সে গান গাইছে। (গান = কর্ম)
📌 অকর্মক ক্রিয়া – যে ক্রিয়ার কোনো কর্ম থাকে না, বরং কেবল কর্তার অবস্থা বা কর্মপ্রবণতা প্রকাশ করে।
✔ উদাহরণ: আমি হাঁটছি।
✔ সে ঘুমাচ্ছে।
📌 যৌগিক ক্রিয়া – যখন একটি ক্রিয়ার সঙ্গে সহায়ক ক্রিয়া যুক্ত হয়ে নতুন অর্থ তৈরি করে, তখন তাকে যৌগিক ক্রিয়া বলে।
✔ উদাহরণ: শিখে নাও, দেখে এসো, শুনে বোঝো।
ক্রিয়ার রূপান্তর
বাংলা ভাষায় ক্রিয়ার বিভিন্ন রূপান্তর হয়, যা প্রধানত কাল, পুরুষ, সংখ্যা ও বাক্যের ধরণ অনুসারে পরিবর্তিত হয়।
১. ক্রিয়ার কাল পরিবর্তন (রূপান্তর)
ক্রিয়া বর্তমান, অতীত ও ভবিষ্যৎ কালে পরিবর্তিত হতে পারে।
📌 উদাহরণ:
✔ বর্তমান কাল – আমি লিখি।
✔ অতীত কাল – আমি লিখেছিলাম।
✔ ভবিষ্যৎ কাল – আমি লিখবো।
২. ক্রিয়ার পুরুষ পরিবর্তন
বাংলা ভাষায় তিনটি পুরুষ রয়েছে:
✔ উৎকৃষ্ট পুরুষ – আপনি/আপনারা
✔ মধ্যম পুরুষ – তুমি/তোমরা
✔ নিম্ন পুরুষ – সে/তারা
📌 উদাহরণ:
✔ উৎকৃষ্ট পুরুষ: আপনি যাবেন।
✔ মধ্যম পুরুষ: তুমি যাবে।
✔ নিম্ন পুরুষ: সে যাবে।
৩. ক্রিয়ার সংখ্যা পরিবর্তন
✔ একবচন: আমি যাই।
✔ বহুবচন: আমরা যাই।
✔ একবচন: তুমি পড়ো।
✔ বহুবচন: তোমরা পড়ো।
৪. ক্রিয়ার ভাববাচ্য পরিবর্তন
📌 কর্তৃবাচ্য: কর্তা দ্বারা ক্রিয়াটি সংঘটিত হয়।
✔ আমি গল্প লিখেছি।
📌 কর্মবাচ্য: কর্মকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
✔ গল্পটি লেখা হয়েছে।
📌 ভাববাচ্য: কর্তা বা কর্ম উল্লেখ না করে শুধুমাত্র ক্রিয়াটি বলা হয়।
✔ লেখা হয়েছে।
অনুশীলনী
✔ (১) নিচের বাক্যগুলোর ক্রিয়া চিহ্নিত করো:
1️⃣ সে গান গাইছে।
2️⃣ আমি বই পড়েছি।
3️⃣ তারা খেলতে গেছে।
✔ (২) নিচের ক্রিয়াগুলোর কাল পরিবর্তন করো:
1️⃣ সে বাজারে যায়। (অতীত ও ভবিষ্যৎ কালে রূপান্তর করো)
2️⃣ আমি স্কুলে পড়ি। (অতীত ও ভবিষ্যৎ কালে রূপান্তর করো)
✔ (৩) নিচের বাক্যগুলোর বাচ্য পরিবর্তন করো:
1️⃣ শিক্ষক ছাত্রদের পড়াচ্ছেন। (কর্মবাচ্যে রূপান্তর করো)
2️⃣ রাম ফল খাচ্ছে। (ভাববাচ্যে রূপান্তর করো)
উপসংহার
ক্রিয়া বাংলা ভাষার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যাকরণিক উপাদান। এটি বাক্যের প্রাণ, কারণ এটি ছাড়া কোনো বাক্য সম্পূর্ণ হয় না। ক্রিয়ার বিভিন্ন রূপান্তর বোঝা ও ব্যবহার করা ব্যাকরণের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সঠিক ক্রিয়া ব্যবহার করলে বাক্য অর্থবোধক ও স্পষ্ট হয়।