ভূমিকা:
যেকোনো বাক্যের মূল কাঠামো গঠিত হয় বিভিন্ন পদ দ্বারা। একটি বাক্য অর্থবহ ও যথাযথভাবে গঠনের জন্য পদসমূহের সঠিক ব্যবহার জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই অধ্যায়ে আমরা “পদ” সম্পর্কে বিস্তারিত জানব, এর সংজ্ঞা, প্রকারভেদ, বৈশিষ্ট্য এবং ব্যবহারিক দৃষ্টান্তসহ ব্যাখ্যা করব।
১. পদ কী?
যে শব্দ বাক্যে ব্যবহৃত হয়ে একটি নির্দিষ্ট অর্থ প্রকাশ করে, তাকে পদ বলে। অন্যভাবে বলা যায়, বাক্যের গঠনকল্পে ব্যবহৃত শব্দ বা শব্দগুচ্ছকে পদ বলে।
🔹 উদাহরণ:
✅ “রাহুল বই পড়ে।” এখানে “রাহুল”, “বই” ও “পড়ে” — তিনটি পৃথক পদ।
✅ “আমি দ্রুত স্কুলে যাই।” বাক্যটিতে “আমি”, “দ্রুত”, “স্কুলে” এবং “যাই” — চারটি পদ আছে।
২. পদের প্রকারভেদ
বাংলা ব্যাকরণে পদ প্রধানত আটটি ভাগে বিভক্ত হয়। নিচের ছকটি পদ ও তাদের সংজ্ঞাসহ ব্যাখ্যা করছে—
পদের নাম | সংজ্ঞা | উদাহরণ |
বিশেষ্য পদ | যে পদ দ্বারা কোনো ব্যক্তি, বস্তু বা স্থানের নাম বোঝায় | বই, ছাত্র, ঢাকা |
বিশেষণ পদ | যে পদ বিশেষ্যের গুণ বা অবস্থা নির্দেশ করে | লম্বা, সুন্দর, ভালো |
সর্বনাম পদ | যে পদ বিশেষ্যের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয় | আমি, তুমি, সে |
ক্রিয়া পদ | যে পদ দ্বারা কোনো কাজ বা অবস্থার প্রকাশ ঘটে | পড়ছে, যাচ্ছে, এসেছে |
অব্যয় পদ | যে পদ অপরিবর্তনীয় এবং বাক্যের মধ্যে সংযোগ ঘটায় | এবং, কিন্তু, যদিও |
ক্রিয়া বিশেষণ | যে পদ ক্রিয়ার গুণ বা পরিমাণ বোঝায় | দ্রুত, আস্তে, ভালোভাবে |
সংখ্যাবাচক পদ | যে পদ সংখ্যা বা পরিমাণ বোঝায় | এক, দুই, দশজন |
সমুচ্চয়ী অব্যয় | দুটি বাক্য বা বাক্যের অংশকে সংযুক্ত করে | এবং, অথবা, কিন্তু |
৩. বিশেষ্য পদ ও তার প্রকারভেদ
বিশেষ্য পদ সেই পদ, যা দ্বারা ব্যক্তি, বস্তু, প্রাণী, স্থান বা চিন্তাধারার নাম বোঝানো হয়। এটি চার প্রকার হতে পারে—
বিশেষ্যের ধরন | সংজ্ঞা | উদাহরণ |
নামবাচক বিশেষ্য | ব্যক্তি, বস্তু বা স্থানের নাম | রবীন্দ্রনাথ, ঢাকা, বই |
গুণবাচক বিশেষ্য | কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর গুণ বোঝায় | সততা, সৌন্দর্য, ভদ্রতা |
বস্তুবাচক বিশেষ্য | যে বিশেষ্য ইন্দ্রিয় দ্বারা অনুভব করা যায় | বাতাস, জল, আলো |
সমষ্টিবাচক বিশেষ্য | কোনো গোষ্ঠী বা দলের নাম বোঝায় | জনতা, ছাত্রসমাজ, পরিবার |
৪. বিশেষণ পদ ও তার ব্যবহার
বিশেষণ পদ দ্বারা বিশেষ্যের গুণ, পরিমাণ বা অবস্থা প্রকাশ করা হয়। এটি তিন প্রকারের হতে পারে—
✅ গুণবাচক বিশেষণ: সুন্দর, লম্বা, খারাপ।
✅ পরিমাণবাচক বিশেষণ: অনেক, কিছু, সামান্য।
✅ সূচক বিশেষণ: এই, সেই, ওই।
🔹 উদাহরণ:
- সে দ্রুত হাঁটে। (গুণবাচক বিশেষণ)
- আমি তিনটি বই কিনেছি। (পরিমাণবাচক বিশেষণ)
৫. সর্বনাম পদ ও তার প্রকারভেদ
সর্বনাম পদ বিশেষ্যের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয় এবং এটি পাঁচ প্রকার হতে পারে—
সর্বনামের ধরন | সংজ্ঞা | উদাহরণ |
ব্যক্তিবাচক সর্বনাম | ব্যক্তি বা প্রাণীর পরিবর্তে ব্যবহৃত হয় | আমি, তুমি, সে |
প্রশ্নবাচক সর্বনাম | প্রশ্ন করার জন্য ব্যবহৃত হয় | কে, কী, কেমন |
সংযোজক সর্বনাম | বাক্য সংযোজন করতে ব্যবহৃত হয় | যে, যিনি, যা |
অনির্দেশিক সর্বনাম | নির্দিষ্ট কিছু বোঝায় না | কেউ, কিছু, কোনো |
আত্মবাচক সর্বনাম | নিজের প্রতি ইঙ্গিত করে | নিজে, নিজের, নিজেই |
৬. ক্রিয়া পদ ও তার ব্যবহার
ক্রিয়া পদ দ্বারা কাজ বা অবস্থার প্রকাশ ঘটে। এটি তিন প্রকার—
✅ সক্রিয় ক্রিয়া: গৃহীত ক্রিয়া বোঝায় (সে খাচ্ছে)।
✅ নিষ্ক্রিয় ক্রিয়া: ক্রিয়া প্রভাবিত হওয়া বোঝায় (দরজা খোলা হলো)।
✅ সহায়ক ক্রিয়া: অন্য ক্রিয়ার সাথে ব্যবহৃত হয় (সে পড়তে চায়)।
৭. অব্যয় পদ ও তার ভূমিকা
অব্যয় পদ পরিবর্তিত হয় না এবং বাক্যে বিভিন্ন উপাদান সংযুক্ত করতে সাহায্য করে। উদাহরণ—
- সংযোজক অব্যয়: এবং, অথবা, কিন্তু।
- প্রশ্নবাচক অব্যয়: কেন, কখন, কিভাবে।
৮. অনুশীলনী
১. পদ কী? সংজ্ঞা লিখুন।
২. বিশেষ্য ও বিশেষণ পদের পার্থক্য ব্যাখ্যা করুন।
৩. নিচের বাক্যে ব্যবহৃত সর্বনাম চিহ্নিত করুন— “সে আমাকে বলল যে তুমি আসবে।”
৪. নিম্নলিখিত বাক্যে ক্রিয়া পদ চিহ্নিত করুন— “আমি বই পড়ছি।”
৫. অব্যয় পদের তিনটি উদাহরণ দিন।
উপসংহার:
এই অধ্যায়ে আমরা পদ ও তার প্রকারভেদ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। ব্যাকরণের সঠিক ব্যবহার শিখতে হলে পদের প্রকৃতি, গঠন ও প্রয়োগ সম্পর্কে ভালোভাবে জানা আবশ্যক। পদ বিশ্লেষণের মাধ্যমে বাক্যের শুদ্ধতা ও ভাষার সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করা যায়।